বাংলাদেশে কর্মক্ষত্রে ৩৬ শতাংশ নারীকর্মী যৌন হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হয়। যার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তৈরি পোশাক খাতে। অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের এক গবেষণা বলছে, কর্মক্ষেত্রে নারীদের ওপর সহিংসতার মাত্রা ব্যাপক হলেও এ বিষয়ে আইনের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফলে কর্মক্ষেত্রে নারীর ওপর যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতা নির্মূল বিষয়ক আইএলও কনভেনশন-১৯০ জাতীয় সংসদে অনুসমর্থনে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন শ্রম খাত সংশ্লিষ্টরা। গতকাল মঙ্গলবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি আয়োজিত এক সংলাপে এমন দাবি করে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনটি পাঠ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ব্যারিস্টার আরাফাত হোসেন খান। ওই গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে নারীরা ব্যাপকহারে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। যার ৮৬ শতাংশ হয় পুরুষ সুপারভাইজারের মাধ্যমে। যৌন নিপীড়ন ও সহিংসতার শিকার ৬৭ শতাংশ নারী কারখানার সহিংসতা দমন কমিটির কোনো সাহায্য পায় না। অথবা বেশিরভাগ কারখানায় এই কমিটিও নেই। ফলে পোশাক খাতে নিয়োজিত নারীদের ৬৪ শতাংশ এই কমিটি সম্পর্কে জানে না। নির্যাতনের শিকার বেশিরভাগই ভয়ে কারও কাছে মুখ খোলে না।
আরাফাত হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান, সাধারণ আইন ও শ্রম আইনে নারীর ওপর সহিংসতা প্রতিরোধে অনেক ধারা রয়েছে। তবে কার্যকারিতার অভাবে কর্মক্ষত্রে নারীর ওপর সহিংসতা এড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য আইএলও কনভেনশন-১৯০ অনুসমর্থনে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য শামসুন্নাহার ভুঁইয়া বলেন, বাংলাদেশের শ্রম খাতে ১ কোটি ২০ লাখ নারী নিয়োজিত। এর বাইরেও নারীরা কৃষিসহ নানা পেশায় নিয়োজিত থেকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে নারীরা আজও কর্মক্ষেত্রে সমমর্যাদা পাচ্ছে না। তিনি বলেন, দেশের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ শ্রমজীবী হলেও জাতীয় সংসদে এই জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব খুবই কম। বলা যায়, সংসদে শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের পক্ষে দাবি তোলা সংসদ সদস্য একেবারেই সীমিত।
বাংলাদেশ লিগ্যাল সার্ভিসেস ট্রাস্টের (ব্লাস্ট) উপপরিচালক বরকত আলী বলেন, বাংলাদেশের শিল্প মালিকরা শ্রম যতটুকু মানে সেটি আন্তর্জাতিক চাপের কারণে। তারা আজও শ্রমিকদের দাসের মতো ব্যবহার করতে চায়। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে আইএলও ১৯০ অনুসমর্থনের পাশাপাশি মালিকদের এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়া নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের পরিচালক আসগর আলী সাবির। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সেকান্দার আলী মিনা। এতে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শ্রম আদালত বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সেলিম আহসান খান, শ্রমিক নেতা চৌধুরী আশিকুল আলম, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক ইউসুফ আলী ও বিভিন্ন খাতের শ্রমিক প্রতিনিধি।
উৎস: দেশ রুপান্তর