ইভটিজিং বলতে আগেকার দিনে আমরা রাস্তাঘাটে নারীদের বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত করাকে বোঝাত। কিন্তু এখনকার দিনে ইভটিজিংয়ের আরও অনেক মাধ্যম হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখেই বলতে হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো বিশেষ করে ফেসবুক আজকাল যেন ইভটিজিং এবং বিভিন্ন ধরনের হয়রানির সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হয়ে গেছে। ফেসবুক স্ট্যাটাস, মেসেঞ্জার, কমেন্ট এবং আরও নানাভাবে নারীদের এখন হয়রানি করা হয়। এটাকে আমরা ডিজিটাল কিংবা ই-ইভটিজিংও বলতে পারি। সারা বিশ্বে এমনকি উন্নত দেশগুলোতেও এই ই-ইভটিজিং ভয়াবহভাবে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বর্তমানে কেউ নিরাপদ নয়। নারীরা এখানে আরও বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রায়ই দেখা যায়, ফেসবুকের মাধ্যমে নারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমটি ব্যবহার করে এক শ্রেণীর মানুষ পরিচিত কিংবা অপিরিচিত ফিমেল আইডিগুলোতে আপত্তিকর এবং অস্বস্তিকর নানা কুপ্রস্তাব পাঠায়। প্রত্যাখ্যান হলে ওই আইডি ব্যবহার করে বিভিন্ন ফেইক আইডি খুলে দেয় এবং প্রোফাইলে বিভিন্ন আপত্তিকর ছবি আপলোড করে। এর ফলে নারীরা সামাজিক এবং ব্যক্তিগতভাবে একটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাচ্ছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য ফেসবুক কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো একটি পারস্পরিক ভারসাম্যপূর্ণ যোগাযোগ রক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠিত হলেও সেটি ক্রমেই ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ছে। কারণ এখনও পর্যন্ত ফেইক আইডি প্রতিরোধ করার মতো সক্ষমতা ফেসবুক কর্তৃপক্ষের নেই। ফেসবুক নারীদের হয়রানি করার অন্যতম আরেকটি দিক হচ্ছে ব্ল্যাকমেইল করা। নারীরা আজকাল বিভিন্নভাবেই ব্ল্যাকমেইলের শিকার হচ্ছেন। কিছু কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী একজন নারীর প্রোফাইলে থাকা ছবিগুলোকে বিভিন্ন অসৎ উদ্দেশ্য ব্যবহার করে ভুক্তভোগী নারীকে ব্ল্যাকমেইল করে। এতে নারীরা পারিবারিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। অনেকেই আত্মহত্যার পথও বেছে নিচ্ছেন। আমাদের দৈনন্দিন পথচলায় কোন না কোন কারণে একজনের সঙ্গে অন্য জনের মনোমালিন্য হতেই পারে। তাই বলে সঠিক সমাধানে না গিয়ে একজন নারীকে নিয়ে কুৎসা রটানো কিংবা ব্ল্যাকমেইল করা কোন ব্যক্তিত্ববান সুস্থ পুরুষের কাজ হতে পারে না। ফেসবুকে বা অন্য কোন মাধ্যমে নারীদের হয়রানি কমাতে হবে। কথায় কথায় ইচ্ছেমতো হ্যাশট্যাগ দিয়ে নারীদের নিয়ে কুৎসা রটানো কিংবা আপত্তিকর মন্তব্য করার মনমানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। ব্যক্তিগত কিংবা অন্য কোন মনোমালিন্য হলে সেটা অন্য পন্থায় স্বাভাবিকভাবে সমাধান করার সদিচ্ছা থাকতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে একজন পুরুষের একটু খামখেয়ালিপনা বা দায়িত্বহীনতার কারণে একজন নারীকে সামাজিক কিংবা ব্যক্তিগতভাবে হয়রানি করার ফল ওই নারীর আত্মহত্মার কারণও হতে পারে। সামাজে এ ধরনের দুর্ঘটনা বা আত্মহত্যার দায় আমরা কেউ এড়াতে পারিনা। তাই একজন নারীকে নিয়ে কুৎসা রটানোর আগে আমাদের ভাবতে হবে সে আমাদেরই বোন, তার নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের নিজেদের। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, যে কোন দায়িত্ববান পুরুষ নারীদের যথাযথ সম্মান দিয়ে তাদের এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। তাদের এগিয়ে যাওয়া মানে আমাদেরই এগিয়ে যাওয়া, আমাদের সমাজেরই এগিয়ে যাওয়া। আর যারা ফেসবুক ব্যবহার করে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে নারীদের হয়রানি করেই যাবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ করতে হবে। তা না হলে বিচারহীনতার সংস্কৃতি নারী হয়রানিকে আরও বেশি উস্কে দেবে। এসবের পাশাপাশি নারীদেরও আত্মসচেতনতার সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে হবে। আজকের কর্মটি যেন আগামীতে কোন এক অসৎ শ্রেণীর মানুষের হয়রানির উপাদান না হয় সে ব্যাপারে যথেষ্ট খেয়াল রাখতে হবে। সবশেষে নারীদের সম্মানের সঙ্গে বড় হতে দিলে, শিক্ষিত হতে দিলে এর ফলাফল হিসেবে নেপোলিয়নের সেই বিখ্যাত উক্তিটি বলতে চাই ‘আমাকে একজন শিক্ষিত মা দাও, আমি একটি শিক্ষিত জাতি উপহার দেব’।