ঢাকা শহরে নারী গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতন রোধে প্রয়োজন সঠিক নীতিমালা

Share on facebook
Share on google
Share on twitter
Share on linkedin

যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের নারীরা লিঙ্গবৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা কোন ক্রমেই যেন কমছে না। কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন এই সংখ্যা আরো কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আর এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি হুমকির মাঝে রয়েছে নারী গৃহকর্মীরা। তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১০ মিলিয়নের বেশি নারী শারীরিক ও যৌন হয়রানির শিকার হয়।

শহরের বাসা-বাড়িতে বিভিন্ন বয়সের গৃহকর্মী রাখার রীতি বছর বছর ধরে চলে আসছে। এর মধ্যে খন্ডকালীন এবং আবাসিক এই দুই ধরনের গৃহকর্মী রাখা হয়। যারা সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে এসেও নানা ধরনের হয়রানির স্বীকার হয়। গৃহকর্মীদের সার্বিক অবস্থা এবং নির্যাতনের ভয়াবহতা নিয়ে ভয়েস ঢাকা শহরের গৃহকর্মীরা কী ধরনের নির্যাতনের স্বীকার হয় এ বিষয়ে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে।

বিভিন্ন বয়সের প্রায় ৫০ জন আবাসিক ও অনাবাসিক গৃহকর্মীকে নিয়ে একটি জরিপ পরিচালনা করে। অংশগ্রহনকারী গৃহকমীদের মধ্যে ১২ থেকে ২০ বছর বয়সী শতকরা ৩৫ ভাগ নারী গৃহকর্মী আবাসিক এবং ২২ থেকে ৪৫ বছর বয়সি শতকরা ৬৫ ভাগ নারী গৃহকর্মীরা খণ্ডকালীন কাজ করেন।

গৃহকর্মীদের মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ ছয় মাসের অধিক সময় ধরে কাজ করছেন। আর শতকরা ২০ জনের কম ছয় মাসের কম সময় ধরে কাজ করছেন। তবে যারা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে আসছেন, তাদের কাছ থেকে জানা  গেছে, দীর্ঘ কর্মজীবনে তারা অসংখ্য বার চাকরীচ্যুত হয়েছেন এবং বারবার কর্মস্থল পরিবর্তন করতে হয়েছে। বর্তমান কর্মস্থলে অনেকেই ছয় মাসের কম সময় ধরে কাজ করছেন।

কর্মঘন্টা হিসাব করলে খণ্ডকালীন গৃহকর্মীরা দৈনিক ২/৩ ঘন্টার বেশি কাজ করেন। তাছাড়া নিয়মিত কাজের পাশাপাশি অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজও করতে হয় যেসব কাজের জন্য তারা কোনো বাড়তি বেতন পায় না। এমনকি উৎসবেও তাদের অতিরিক্ত ভাতা প্রদান করা হয় না। এছাড়া যারা আবাসিক গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন তাদের দৈনিক কর্মঘন্টার কোন হিসাব থাকে না, সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত গৃহস্থালির নানা কাজকর্ম করতে থাকে।

বাংলাদেশের গৃহকর্মীদের বেতনের পরিমাণ অত্যন্ত কম, যা দিয়ে একটি সংসার কোনো ভাবেই পরিচালনা করা সম্ভব নয়। গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল থেকে জানা যায় শতকরা ৭৬ শতাংশ নারী তাদের বেতন সন্তুষ্ট নয়। ফলে নানারকম সমস্যার মধ্যে তাদের সংসার চালাতে হয়। ভয়েসের গবেষণা অনুযায়ী গৃহকর্মী নারীদের মাসিক আয় ৫০০০ টাকারও কম। গৃহকর্মীদের বেতন প্রদানের ক্ষেত্রে সবসময় বিলম্ব দেখা যায়, অনেক গৃহকর্মীর বেতন পেতে মাসের মধ্যবর্তী সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। 

গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুসারে শতভাগ গৃহকর্মীই কোন সাপ্তাহিক ছুটি পান না। অসুস্থতাজনিত কারনে একদিন কাজে আসতে না পারলে মালিক কর্তৃক নানা ধরনের গালাগাল শুনতে হয়।  যা তাদের জন্য মানসিকভাবে যন্ত্রণাদায়ক।

গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল অনুসারে গৃহকর্মীদের যৌন হয়রানি এবং যৌন নির্যাতনের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। গবেষণায় অংশগ্রহণকারী গৃহকর্মীদের মধ্যে শতকরা ১৫ ভাগ নারী যৌন নির্যাতনের শিকার। এছাড়া চাকরীচ্যুত হবার ভয় অথবা সামাজিক মান-সম্মানের কথা বিবেচনা করে শতকরা ৩৫ ভাগ নারী এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে চাননি। এছাড়া নিরাপত্তা নিয়ে সমস্যা হয় না শতকরা ৫০ ভাগ গৃহকর্মীর।

গৃহকর্মীদের শতকরা ৭০ ভাগ  কোভিডে আক্রান্ত বা সংক্রমণের শিকার হননি। শতকরা ৩০ ভাগের শরীরে ঠান্ডা লাগা বা জ্বর অনুভূত হয়েছিল, যা ক্ষণস্থায়ী ছিল কিন্তু করোনা কি না তা পরীক্ষা করার জন্য কোন ব্যবস্থা তারা গ্রহন করেন নি। তবে ক্ষণস্থায়ী এসব উপসর্গের কারণেই অনেকেই চাকরীচ্যুত হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য থেকে দেখা যায় উপসর্গ  প্রকাশ পাওয়া গৃহকর্মীদের শতকরা ৬০ চাকরীচ্যুত হয়েছে। করোনার লক্ষণ প্রকাশের পর অনেক গৃহকর্মী মালিক কর্তৃক বিরূপ আচরণেরও শিকার হয়েছিল। এক্ষেত্রে লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া গৃহকর্মীদের তাদের মালিকপক্ষ কোন সহায়তা করেনি।  শতকরা ৩৭ গৃহকর্মী কোভিড ভ্যাকসিন পেয়েছে। যা তাদের পরিবারের লোকজন, স্বাস্থ্যকর্মী বা এনজিও কর্মী পেতে সাহায্য করেছিল।

নারী গৃহকর্মীদের ওপর নির্যাতন নারীর অধিকারের পরিপন্থি, তথা মানবাধিকার পরিপন্থি। নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন রোধে সবার এগিয়ে আসা উচিৎ। এবং সরকারের উচিৎ একটি ন্যূনতম বেতন কাঠামো প্রণয়ন ও কার্যকর করা এবং সুনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা ঠিক করে দেওয়া। সর্বোপরি, নারী অধিকার রক্ষায় গৃহকর্মীদের বিষয়টি মূলধারায় নিয়ে আসা। এ বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারী পর্যায়ে সঠিক নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করা।  

shawon

shawon

Leave a Replay

About

VOICE was established in 2001. VOICE was established with the mandate of creating linkages not only between policy-makers and the communities at the grassroots level, but also between organizations through partnership, networking, and information exchange in the community.

Recent Posts

Follow Us

Follow Us