’ধর্ষণ কোন শব্দ নয়
নির্লজ্জ বাস্তব অসহায় বুকের নিঃসহায় হাহাকার
পৌরুষের একটা জান্তব প্রতিফলন
ধর্ষণ শব্দের গায়ে’।
আদিম বন্যতা ও বর্বরদশা থেকে বিবর্তন ও পরিবর্তনের মাধ্যমে হোমো সেপিয়েন্স তথা মানব জাতি আজ সভ্যতার চরম শিখরে। ধর্ম,দর্শন,বিজ্ঞানের চর্চার মাধ্যমে নিজের বুদ্ধিবৃওিক উৎকর্ষ লাভ করেছে। কিন্তু বাহ্যিক উৎকর্ষতা দেখে মানুষের মন মগজের উৎকর্ষতা উপলব্ধি করা যায় কী? পুরুষতান্ত্রিক আধিপত্য ও তাদের চিন্তা ধারার কারণেই ঘটছে ধর্ষণ। প্রাচীন কাল থেকেই ঘটছে ধর্ষণ। তখন ছিল মানুষ বর্বর কিন্তু বর্তমান এই সভ্য সমাজেও কি সেই বর্বরতা কমেছে? চারিদিকে তাকিয়ে দেখলে আমাদের সহজেই অনুমেয় হয় যে মানুষ বাহ্যিক ভাবে সভ্য হয়েছে কিন্তু নারীর প্রতি আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গিতে পুরুষেরা আদিম বন্যই রয়ে গেছে। রাহুল সাংকৃতায়ন ও লুই হেনরির মতে আদিম সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক। সেই সমাজে নারী ছিল স্বাধীন। সভ্যতার অগ্রগতি ও উন্নয়নে নারীর অবদান সর্বক্ষেত্রে। কিন্তু যেদিন সমাজ পুরুষের হাতে গেছে সেদিন থেকেই শুরু হয়েছে বৈষম্যের। আর এই বৈষম্যের চূড়ান্ত রূপ ধর্ষণ।
পুরুষের এই দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই পুরুষ নারীকে ভেবেছে আর দশটা ভোগ পণ্যের মত পণ্য। তাই এই সভ্য সমাজে ধর্ষণ ঘটলে দোষী পুরুষদের নিয়ে যতটা আলোচনা হয় তার চেয়ে বেশি আলোচনা হয় ধর্ষিতা নারীকে নিয়ে ।যেন নারী তার পোশাকের জন্যই কিংবা ঘর থেকে বের হয়েছে বলেই আজকে ধর্ষিত হয়েছে। যুদ্ধ বা সংঘাতে শত্রু পক্ষকে ঘায়েল করার জন্যে একসময় বেছে নেওয়া হয়েছিল ধর্ষণ অস্ত্রকে। আজকের সভ্য সমাজে নারীর প্রতি চরমতম অবমাননা ও লাঞ্চনার আরেক নাম ধর্ষণ।
যে সময়ে এসে নারীর আজ আরও এগিয়ে যাওয়ার কথা সেই সময়ে নারী এসে সর্বত্র ভয় পাচ্ছে। অপরিচিত পুরুষ দেখলেই আতংক বোধ করছে। বাসে,ট্রেনে,কর্মক্ষেত্রে সর্বত্র সে ভয় পাচ্ছে ধর্ষণের। পত্রিকার পাতা খুললেই ৩ বছরের কন্যা শিশু থেকে শুরু করে ৭০ বছরের বৃদ্ধাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। দেশে গড়ে প্রায় ৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে করোনা মহামারীরর কারণে ঘোষিত লক ডাউনে নারীর প্রতি যেমন বেড়েছে সহিংসতা তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে ধর্ষণ।
বাংলাদেশ পুলিশ বলছে গত বছর ৫ হাজার ৪০০ জন এবং ৮১৫ টি শিশু ধর্ষণের মামলা হয়। ২০১৮ সালে শিশু ধর্ষনের মামলা ছিল ৭১৭ টি এবং নারী ধর্ষণের মামলা ছিল ৩ হাজার ৯০০ টি। পুলিশ হিসাব বলছে,গত বছর ধর্ষণের কারণে ১২ শিশু ও ২৬ জন নারী মারা যান। ২০১৮ সালে এ সংখ্যাছিল ২১ নারী ও ১৪ শিশু।
আইন ও সালিশকেন্দ্র(আসক) এর ২০১৯ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যবলছে,সারাদেশে ধর্ষণের ঘটনা আগেরচেয়ে দ্বিগুণ বেড়েছে। গতবছরসারাদেশেধর্ষণ ও ধর্ষণেরশিকার ১ হাজার ৪১৩ নারী ও শিশু। ২০১৮ সালেসংখ্যাটিছিল ৭১৩।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন বলছে গতবছর ৯০২ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়। ২০১৮ সালে সংখ্যাটি ছিল ৩৫৬। পুরুষের কেন এই ধর্ষণ মানসিকতার পিছনের কারণ কী? এই উত্তর খুজতে গেলে দেখা যায় এই সমাজের বিনির্মান করা হয়েছে নারীকে অধস্তন ও ভোগপণ্য হিসেবে উপস্থাপনের মাধ্যমে। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন একটি শিশু তার সামাজিকীকরণের মাধ্যমে যা শিখে তাই সে রপ্ত করে। জন্মের পর থেকেই নারীশিশুকে দেখা হয় অধস্তন হিসেবে আর পুরুষ শিশু উন্নত। পুরুষ শিশু এটা দেখেই বড় হয়। সে দেখে পরিবারে তার মাকে অত্যাচার করা হচ্ছে,তার বোনকে করা হচ্ছে প্রাপ্তঅধিকার থেকে বঞ্চিত। পরিবার থেকে বের হয়ে সমাজে, তারপর স্কুল, কলেজ, কর্মক্ষেত্রে সে দেখছে নারীকে নির্যাতন করা হচ্ছে। আর তাদের শিল্পসাংস্কৃতি সমস্তকিছুই তো গড়ে উঠেছে নারীকে ভোগপণ্য ও আমোদের উপাদান হিসেবে। সেই সমাজে দাঁড়িয়ে নারী কি আজ সত্যিই নিরাপদ? পরিসংখ্যান, পত্রিকা ও টেলিভিশনের সংবাদ তো তা বলেনা। যে সমাজের বিনির্মান পুরুষতান্ত্রিক যার পরিচালক পুরুষ সে সমাজে ধর্ষণের চেয়ে মূখ্য বিষয় হয়ে উঠে নারীর পোশাক ও তার ঘরের বাইরে চলাফেরা।
এদেশে নারীর অবস্থান আজ কোথায়? নারীদের এই অবস্থানের পরিবর্তন আনয়ন এখন সময়ের দাবী। ধর্ষণের অপরাধে প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ,গুলি করে হত্যা,ঢিল মেরে মেরে হত্যা,মৃতুদণ্ড নিশ্চিত করা দেশগুলোতে আজও ধর্ষণ বন্ধ করা যায়নি বা কাক্ষিত ফলাফল অর্জন সম্ভব হয়নি। তাই বলে বিচারের নামে প্রহসন,রাজনৈতিক নোংরা হস্তক্ষেপ,বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি গ্রহণযোগ্য নয়। সময়ের প্রয়োজনে আইনের ধারা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা গুরুত্বপূর্ন হয়ে পড়েছে। আর চলমান আইনের ১৮০ কার্যদিনের মধ্যে বিচারকার্য সম্পন্ন ও দৃষ্টান্ত শাস্তি নিশ্চিত করার বার্তা, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে। এছাড়াও জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও ধর্ষণ, হত্যাকান্ড সহ বিভিন্ন নেক্কারজনক কর্মকান্ড বন্ধে রাষ্ট্র ও মিডিয়া একত্রে যুক্ত হয়ে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রমের উদ্যোগ নিতে হবে।
Source: http://gonobarta.com/news/1948.html#.X4KhX3kzbIV